জাকির সিকদার: মুন্সীগঞ্জে মুদ্রণ শিল্প নগরী স্থাপনসহ ৮টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৪২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৯৫৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ২৫
কোটি ৪ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৪৬৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ার পার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় পরিকল্পনা সচিব তারিকুল-উল ইসলাম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা, আইএমইডির সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এবং সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘স্ক্যাডা একটি অত্যাধুনিক সিস্টেম যার মাধ্যমে দূর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ হতে বিদ্যুত সরবরাহ নিয়ন্ত্রক করাসহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যুতের সকল প্যারামিটার যেমন-ভোল্টেজ, কারেন্ট, ফ্রিকোয়েন্সি, পাওয়ার ফ্যাক্টরসহ কিলোওয়াট ও কিলোভার পর্যবেক্ষণ করা যায়। উপকেন্দ্র হতে রিপোর্ট টার্মিনাল ইউনিট বা গেটওয়ে এর মাধ্যমে তথ্যাদি সংগ্রহপূর্বক স্ক্যাডা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সার্ভারে সংরক্ষিত হয়। এ সকল তথ্যাদির পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও মানসম্মত বিদ্যুৎ গ্রাহক আঙ্গিনায় পৌঁছানো যায়।’
পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত ও একাডেমিক সুবিধা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুশাসন দিয়েছেন যে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জলাশয়ের ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে। মন্ত্রী বলেন, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে অন্তত ২ হাজার মিলিয়ন ডলার আয় করতে চাই। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় ক্যাম্পাস স্থাপন প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত ও একডেমিক সুবিধা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের খাদ্য ও বিকিরণ জীববিজ্ঞান সুবিধাদিও আধুনিকীকরণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ডেসকো এলাকায় সুপারভাজরি কন্ট্রোল ও ডাটা এ্যাকুইজিশন (স্ক্যাডা) সিস্টেম স্থাপন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫২ কোটি ২০ লাখ টাকা।
বিসিক মুদ্রন শিল্প নগরী প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কের উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। রুমা-বগালেক-কেওক্রাডং সড়ক উন্নয়ন ১ম পর্যায় নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ৮৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের বিস্তারিত হচ্ছে, দেশে মোট ৫ হাজার ৫০০টি মুদ্রণ শিল্প আছে যার মধ্যে ৩ হাজারটি ঢাকায় গড়ে উঠেছে। মোট ৫ হাজার ৫০০টি মুদ্রণ শিল্পের মধ্যে বড় ১ হাজারটি, মাঝারি ২ হাজারটি এবং ক্ষুদ্র ২ হাজার ৫০০টি। এ সমস্ত মুদ্রণ শিল্প ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত। প্রায় ৭০ শতাংশ মুদ্রণ শিল্প অপরিকল্পিতভাবে ঢাকায় গড়ে উঠেছে, যা পরিবেশ বিপর্যয় ও দূষণের সৃষ্টি করছে। মুদ্রণ শিল্পে যে পণ্য ও সেবা উৎপাদিত হয় তার বার্ষিক মূল্য প্রায় ১৫০ কোটি টাকা এবং এর মধ্যে রফতানি আয় ১৫০ কোটি টাকা। এ শিল্পে প্রত্যক্ষভাবে ১ দশমিক ৩০ লক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ২ দশমিক ৭০ লক্ষসহ মোট প্রায় ৪ লাখ লোক নিয়োজিত। প্রস্তাবিত বিসিক মুদ্রণ মিল্প নগরীতে ৩৮৫টি প্লট স্থাপিত হবে। যাতে ৩৮০টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইউনিট প্রতিষ্ঠিত হবে। এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইউনিটগুলোতে ১৫ হাজার ২০০ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। স্বাধীনতার পর হতে এ পর্যন্ত ৭৪টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৭০টি হচ্ছে জেনারেল টাইপ ও ৪টি হচ্ছে মনোটাইপ এস্টেট। ২০১০ সালের শিল্পনীতিতে মুদ্রণ শিল্প খাতকে সেবা খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।